প্রত্যয় ডেস্ক, পশ্চিমবঙ্গ বিশেষ সংবাদদাতাঃ শুদ্ধিকরণ, নাকি রেষারেষি? বেশ কিছুদিন ধরে তৃণমূল নেতা–মন্ত্রীদের পারস্পরিক দোষারোপ এবং হুমকিতে রীতিমতো প্রশ্ন উঠে গিয়েছে পশ্চিমবাংলার রাজনৈতিক মহলে। আগেই বিতর্ক তৈরি করেছিলেন অনুব্রত মণ্ডল, উদয়ন গুহরা। রবিবার উত্তরপাড়ার কর্মিসভায় বিতর্ক তৈরি করেন বেচারাম মান্না এবং প্রবীর সরকার। হুগলির জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদবকে ইঙ্গিত করে বলেন, কেউ কেউ নাকি দল ভাঙিয়ে খাচ্ছেন। কিন্তু কর্মীদের বঞ্চিত করছেন। সেই নেতাদের দল থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন।
প্রায় একই কথা বলেন তৃণমূল বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল। তিনিও দিলীপ যাদবকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘কর্মীরাই দলের শক্তি। কোনও নেতা দলে থেকে যদি তাঁদেরই বঞ্চনা করেন, তা হলে সেই নেতাকে দল থেকে বের করে দেওয়া হবে। এই পরিবেশ এখন হুগলিতে তৈরি হয়েছে। দলের কিছু পচা মুখের জন্য জেলায় বিজেপির ভোট বেড়েছে।’ যদিও যাঁর বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ, সেই দিলীপ যাদব বলেছেন, ‘নেত্রী ও দলের নির্দেশেই দলকে শক্তিশালী করতে সারাদিন কাজ করার চেষ্টা করি। কে কী বলছেন, তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। আমার কাজ দলের নির্দেশ পালন করা। আমার কোনও ভুল হলে দল বলবে। আমিও শুধরে নেব। তবে কেউ প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে কিছু বললে, সেটা তাঁর ব্যাপার। এ নিয়ে আমার কিছু এসে–যায় না।’
আর সেই বিতর্কের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ফের বিতর্ক তৈরি হল তৃণমূলের অন্দরেই। এবার বিতর্ক তৈরি করলেন মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত। সোমবার তিনি সপ্তগ্রামে কর্মিসভায় বেশ ক্ষোভের সঙ্গেই বলেন, ‘কেউ কেউ বলে বেড়াচ্ছেন, তিনি নাকি মস্তান। আমি তাঁকে বলছি, আমি তপন দাশগুপ্ত। আমিই সবচেয়ে বড় মস্তান। তুমি কী মস্তানি করবে, একুশের ভোটের পর দু’দিক দিয়ে পেটানো হবে।’ কথা হল, তিনি হঠাৎ এ ভাবে ক্রুদ্ধ হয়ে উঠলেন কেন? শোনা যাচ্ছে, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে মন্ত্রী তপন দাশগুপ্তকে হারাতে দলের মধ্যেই নাকি ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। তাতে মদত দিচ্ছেন কোনও কোনও নেতা। তাঁরা কর্মীদের খেপিয়ে তুলছেন। এদিন তাঁদের তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘যাঁরা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে এবার পাল্টা ষড়যন্ত্র হবে। পুলিশ, আইবি দু’নম্বরি নেতাদের তালিকা তৈরি করবে। তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একুশে আমিই জিতব।’
এর পরই তিনি দু’দিক দিয়ে পেটানোর অর্থ ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘একুশের ভোটে জেতার পর একদিকে সিপিএম আর বিজেপিকে পেটানো হবে, আর অন্যদিকে, দলের মধ্যে থেকেও যাঁরা ষড়যন্ত্র করে চলেছেন, তাঁদেরও পেটানো হবে। মনে রাখবেন, ২০০৮ সালে মহানাদে ৪০টি গাড়ি নিয়ে সিপিএমকে পিটিয়েছিলাম। ষড়যন্ত্রকারীদের কাউকে রেয়াত করা হবে না।’ পাশাপাশি তিনি নাম না করে স্থানীয় এক বিজেপি নেতার তীব্র সমালোচনা করেন। রীতিমতো হুমকিও দেন তাঁকে। বলেন, ‘এখন মেশিন নিয়ে চমকানো হচ্ছে! ওই মেশিনের মুখ ঘুরিয়ে দিতে আমার এক মিনিটও সময় লাগবে না।’ উল্লেখ্য, ওই বিজেপি নেতা এক সময় তৃণমূলের দাপুটে নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি রাজ্যের এক মন্ত্রীর নাকি ঘনিষ্ঠও ছিলেন। পরে বিজেপিতে যোগ দেন।